প্রকাশিত: Sun, Feb 5, 2023 1:36 PM আপডেট: Sun, Dec 7, 2025 10:21 AM
প্রথম আলোর সংবাদ বিশ্লেষণ এবং দুর্বল সাংবাদিকতা
আরশাদ মাহমুদ : প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গুরুত্বসহকারে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এর শিরোনাম ‘ডিসি, ইউএনওরা যেভাবে জনপ্রতিনিধিদের চেয়েও বেশি ‘ক্ষমতাবান’ হন’। শিরোনাম দেখে আমি খবরটি খুব গুরুত্বসহকারে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, আমি পুরো রিপোর্টটাতে বিশ্লেষণধর্মী কিছু দেখতে পাইনি। বরং প্রতিবেদক ইমাম হোসেন সাঈদ বিশ্লেষণের নামে কিছু ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং সেখানে আওয়ামী সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে সরকারি আমলাদের সম্পর্কে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার বিরক্তিকর বর্ণনা। পুরো রিপোর্টটি পড়ার পর আমার মনে হলো দুর্বল সাংবাদিকতা কাকে বলে, এটা তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। সেই সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এখনকার সম্পাদক বা রিপোর্টাররা প্রকৃত সাংবাদিকতা কী সে ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট ধারণা নেই।
মূল প্রসঙ্গে আসার আগে প্রতিবেদক সাঈদ সম্পর্কে কিছু কথা। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তার নামও আমি কখনো শুনিনি বা আমি যখন প্রথম আলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম সে সময় তাকে কখনো দেখিনি। তার টাইটেল হলো ডেপুটি হেড অফ রিপোর্টিং। খুবই বিরমযঃু একটা ব্যাপার এবং নিশ্চয়ই তিনি ভালো সাংবাদিক হওয়ার কারণে এই ধরনের পদ-পদবি পেয়েছেন। এবার আসি প্রতিবেদনের বিষয়টিতে। এটি পড়ার পর আমার মনে হলো, সাঈদ মূল ব্যাপারটি সরাসরি না বলে শুধু ক্ষুব্ধ আওয়ামী সদস্যরা কীভাবে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আমলাদের দ্বারা অপমানিত হচ্ছেন সে ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। ইংরেজি ভাষায় এটাকে বলে ‘নবধঃরহম ধনড়ঁঃ ঃযব নঁংয রিঃযড়ঁঃ ভড়পঁংরহম ড়হ ঃযব ৎড়ড়ঃ পধঁংব’। একথা কে না জানে যে, স্বৈরশাসনের মূল স্তম্ভ হলো আমলাতন্ত্র এবং বর্তমান যে শাসন ব্যবস্থা চলছে বা এর আগেও যারা ক্ষমতায় ছিলেন বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে কখনোই গণতন্ত্র ছিল না এবং সে কারণেই সবসময় আমলাতন্ত্র ক্ষমতাধর ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা এই সংসদ সদস্যরা কীভাবে গত কয়েকটা নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন তা কারো অজানা নয়। এদের কোনো ভোটের প্রয়োজন হয়নি। কোনো জায়গায় গিয়ে তেমন ক্যাম্পেইন করারও প্রয়োজন ছিলো না। তাদের কাছে একটা ব্যাপার সবচেয়ে জরুরি ছিলো এবং সেটা হলো কীভাবে গণভবন থেকে নমিনেশন কেনা যায় বা পাওয়া যায়। সেটা পেয়ে গেলেই তাদের বিজয় নিশ্চিত এবং সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে বেতন ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সবই নিশ্চিত।
এ প্রসঙ্গে মূল যে প্রশ্নটি সবার আগে প্রতিবেদকের করা উচিত ছিলো সেটি হলো এই পরিস্থিতির জন্য কে এককভাবে দায়ী। সম্ভবত এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ এক বাক্যে যাকে চিহ্নিত করবেন তিনি হলেন দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এটা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় এটা কোনো সাংবাদিকের পক্ষে বলা সম্ভব নয় আর প্রথম আলো যতই নিরপেক্ষতার ভান করুক, এটার ধারে কাছেও তারা যাবে না। এখানেই আমার মূল প্রশ্ন। মতিউর রহমান বা তার সাংবাদিকরা তাহলে কেন ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলে প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দিচ্ছেন। এটা সাংবাদিকতা নয়, এটার নাম অপসাংবাদিকতা। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়Ñ এটা সাংবাদিকতার নামে পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা। এ প্রসঙ্গে আর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন: কেন এমপিরা এতো হতাশ বা ক্ষুব্ধ এবং এ অবস্থার জন্য তারা কি নিজেরাই দায়ী নন? তারা কি ভুলে গেছেন যে এই আমলারাই তাদের ভোটে জিতিয়েছেন।
প্রাসঙ্গিক আরেকটি প্রশ্ন হলো : সংসদ সদস্যরা কেন তাদের ভোটারদের কাছ থেকে কোনো রকম সমর্থন বা সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন না বা তাদের পক্ষে কেন ভোটাররা এগিয়ে আসছেন না? উত্তরটা খুবই সহজ- ভোটাররা জেনে গেছে যে এই সংসদ সদস্যদের ভোট তাদের আর প্রয়োজন নেই এবং তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমলারাই একমাত্র ভরসা। এ কারণেই হয়তো এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় অহেতুক সময় নষ্ট না করে ঢাকায় এসে নেত্রীর গুণগান গাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কারণ এটা করলেই তাদের স্বার্থ হাসিল হবে এবং সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আপনারা কেউ কি স্মরণ করতে পারেন যে এই এমপিরা কখনো পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন? এমনকি সচরাচর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায়ও তাদের কখনো সোচ্চার হতে দেখেছেন বা শুনেছেন?
অপরদিকে এই অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে এই এমপিরাই পুলিশ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় নানা রকম অপকর্ম করে যাচ্ছেন। অপরপক্ষে এই তথাকথিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেখি কীভাবে তারা আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়ে রাতারাতি অঢেল সহায় সম্পদের মালিক হয়েছেন বা হচ্ছেন। অনেকে ইতোমধ্যেই বিদেশে টাকা পাচার করে সেখানে সম্পত্তি এবং বাড়ি গাড়ি বানিয়েছেন। মোদ্দা কথা হলো, এই এমপিরা শুধু নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া আর কোনো দিকে তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই। জনকল্যাণ বা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কোনোভাবেই তাদের প্রায়োরিটি নয়। যদি থাকতো তাহলে তারা আমলাদের কাছে এভাবে অপমানিত হতো না এবং মান-মর্যাদা নিয়ে পদত্যাগ করে চলে যেতো। অবশ্য বাংলাদেশের এইসব সংসদ সদস্যদের নীতিগত কারণে পদত্যাগের ঘটনা প্রায় বিরল।
একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জেনারেল ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তারা দুজনই বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরকম একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল জনকল্যাণমুখী এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো একত্র হয়ে সমস্ত অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং জনগণের পক্ষে কথা বলা। দুঃখের বিষয় বর্তমান অপসংবাদিকতার যুগে এবং দুর্বৃত্ত নামধারী দলবাজ সাংবাদিকদের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস দেশে এখনো অনেক নীতিবান, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক, ত্যাগী সাংবাদিকরা আছেন এবং তারা একদিন নিশ্চয়ই এ অবস্থার অবসান ঘটাবেন। ঈষৎ পরিমার্জিত। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট