প্রকাশিত: Tue, Apr 23, 2024 11:58 AM
আপডেট: Sun, Dec 7, 2025 12:54 AM

শিক্ষিত-অশিক্ষিত বিভাজন বা শ্রেণি দ্বন্দ্ব

আহসান হাবিব : শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত এই বিভাজন শ্রেণিদ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে। শিক্ষিত বলতে আমি এখানে একাডেমিক শিক্ষার কথাই বলছি। এই বিভাজন যে মনস্তত্ত্বের জন্ম দেয় তা হলো শিক্ষিত হলেই সে অশিক্ষিতের চেয়ে বেশি সম্মানীয় এবং সামাজিকভাবে ভোগও বেশি করবে। করেও। একজন শিক্ষিত মানুষ অশিক্ষিতের চেয়ে নানাভাবে ভোগ করে বেশি। দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে কখন? যখন একজন অশিক্ষিত মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ধনী হয়ে উঠে। ধরুন একজন অশিক্ষিত মাছ বিক্রেতা তার ব্যবসা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে বাড়ি গাড়ি করে ফেললো এবং তার মাছের ব্যবসা থেকে আরো ব্যবসা সম্প্রসারণ করলো- একটা গাড়ির শোরুম খুলে বসলো। নিজে এখন গাড়িতে চড়ে, পোশাকআশাকেও পরিবর্তন এসেছে। এই অশিক্ষিত ব্যবসায়ীকে দেখে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করেন যখন পায়ে হেঁটে কিংবা ট্রেনে যাতায়াত করেন, তখন শিক্ষিত মানুষ এই বলে কটাক্ষ করে যে শিক্ষিত হয়ে কি লাভ হলো?  তার মানে হচ্ছে শিক্ষিত হলেই তিনি অশিক্ষিতের চেয়ে বেশি ভোগ করবেন। রাষ্ট্রে শিক্ষা একটি পণ্য, যে যত দাম দিয়ে কিনতে পারে, সে তত ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ে এবং ডিগ্রি নেয়। দরিদ্ররা এটা কিনতে পারে না, ফলে অশিক্ষিত থেকে যায়। কিন্তু ব্যবসা? ব্যবসা সবাই করতে পারে। পুঁজিবাদ মানুষকে এই ক্ষেত্রে স্বাধীন করে দিয়েছে। এই সুযোগে একজন অশিক্ষিত মানুষও কোটিপতি হতে পারে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেন নেহাত মধ্যবিত্ত জীবিকাধারী। শিক্ষা একটি বৈষম্য সৃষ্টির সূচক, কিন্তু ধনী হওয়া কিংবা উৎপাদনের হাতিয়ারের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা কোন ফ্যাক্টর নয়।  তাহলে বোঝা যাচ্ছে পুঁজি সঞ্চয় এবং তা বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জনই পুঁজিবাদী সমাজের চরিত্র এবং ভোগ এই অর্থকে ঘিরেই কমবেশি হয়। পুঁজিপতি শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত ভোগ করবে বেশি এটাই স্বাভাবিক। যখন কেউ স্বাভাবিকতাকে মেনে না নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে, বুঝতে হবে এটা তার শ্রেণীদ্বন্দ্বের প্রকাশ। আমি একজন চিকিৎসক, গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, সঞ্চয় নেই, আমার কাছে গাড়ি হাঁকিয়ে এমন রোগী আসে যে একজন সাধারণ মিষ্টির দোকানের মালিক। ভোগের এই তারতম্য অর্থনৈতিক পরিমাণের উপর নির্ভরশীল, শিক্ষার উপর নয়। এই যে আমি অশিক্ষিত মাছ ব্যবসায়ী এবং মিষ্টির দোকানদারকে বললাম ‘সে’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বললাম ‘আপনি’- এটিই আমার শ্রেণিদ্বন্দ্বের প্রকাশ।  লেখক: ঔপন্যাসিক